সোমবার ২৯শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং , ১৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২০শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরী

বাবা সিকিউরিটি গার্ড, মা কাজের বুয়া ছেলে এখন জজ

নিজস্ব প্রতিবেদক  আলোকিত সংবাদ

 প্রকাশিত: ৬:০৫ অপরাহ্ণ, ২৬ জানুয়ারি, ২০২০

ছবি: আলোকিত সংবাদ

সংসার চালাতে কিছুদিন আগেও রাজধানীর উত্তরায় একটি বাড়িতে সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি করছিলেন মোশারফ হোসেন। তার স্ত্রী’ মাহফুজা খাতুন এলাকার অনেকের বাড়িতে করেছেন বুয়ার কাজ। বাবা-মায়ের ক’ষ্টে উপার্জিত সেই টাকায় পড়ালেখা করে তাদের বড় সন্তান গোলাম রসুল সুইট এখন সহকারী জজ।

১২তম বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিসে ৬৭তম হয়েছেন তিনি। ১৯ জানুয়ারি ঘোষিত গেজেটে তালিকা প্রকাশ করা হয়।

আগামী মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) সহকারী জজ হিসেবে পিরোজপুর জে’লায় যোগদান করবেন তিনি।

সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজে’লার পারুলিয়া ইউনিয়নের কোম’রপুর গ্রামের বাবা মোশারফ হোসেন ও মা মাহফুজা খাতুনের বড় ছেলে গোলাম রসুল সুইট। ছোটবেলা থেকেই মেধাবী সুইট। পরিবারের অভাবও দমাতে পারেনি তাকে। ঠিকমতো খেতে না পারা সেই গোলাম রসুল সুইট এখন জজ।

জাগো নিউজের সঙ্গে নিজের পরিবার ও লেখাপড়া নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করেন সহকারী জজ গোলাম রসুল সুইট। তিনি বলেন, শাখরা কোম’রপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে ভোম’রা ইউনিয়ন দাখিল মাদরাসা থেকে দাখিল পাস করেছি। এরপর দেবহাটা উপজে’লার সখিপুর খানবাহাদুর আহসানউল্লাহ্ কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হই। আমাদের পরিবারে তখন খুব অভাব। বাবাও ছিলেন উদাসীন। কোনো রকমে খেয়ে না খেয়ে দিন চলতো আমাদের।

সুইট আরও বলেন, কলেজ শেষ করার পর লেখাপড়া বন্ধ হওয়ার উপক্রম। এমন সময় সাতক্ষীরা শিল্পকলা একাডেমিতে একটি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করি। সেখান থেকে এক ভাই আমাকে পরাম’র্শ দেয় ঢাকায় গিয়ে কোচিং করার। কিন্তু পরিবারের সেই অবস্থা ছিল না। মায়ের একটি গরু ছিল। সেই গরুটি ১৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে ২০১০ সালের ১৭ মে ঢাকা যাই। এরপর একটি কোচিং সেন্টারে ভর্তি হই।

তিনি বলেন, কিছুদিন পর মায়ের গরু বিক্রি করা সেই টাকাও ফুরিয়ে যায়। বাড়িতেও টাকা চাওয়া বা পরিবারে দেয়ার মতো কোনো অবস্থা ছিল না। কা’ন্নাকাটি করেছিলাম কোচিং পরিচালকের সামনে। এরপর তিনি আমাকে সেখানে বিনামূল্যে কোচিং ও থাকার ব্যবস্থা করেন। এরই মধ্যে সঙ্গে থাকা সহপাঠীদের বন্ধু হয়ে যাই আমি। বন্ধুরাও আমা’র পারিবারিক অবস্থা জানার পর আমাকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করতে থাকে। বন্ধুদের সহযোগিতার কথাগুলো ভুলে যাওয়ার নয়। মা ও বাবা মাঝে মধ্যে এক হাজার বা দুই হাজার করে টাকা দিত। গত এক মাস আগে বাবাকে বাড়িতে নিয়ে এসেছি। সিকিউরিটি গার্ডের চাকরিটা ছেড়ে দিয়েছে। মাকেও এক বছর আগে অন্যের বাড়িতে কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছি।

২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার গল্প জানিয়ে গোলাম রসুল সুইট বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য পরীক্ষা দেই। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তির সুযোগ হয়। বন্ধু ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের পরাম’র্শে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়েই ভর্তি হই। ভর্তির পর টিউশুনির পোস্টার ছাপিয়ে অ’ভিভাবকদের কাছে বিতরণ শুরু করি। এভাবে পাঁটি টিউশুনি জোগাড় হয়ে যায়। এভাবেই চলেছে আমা’র শিক্ষাজীবন।

আত্মীয়-স্বজনরা কখনও খোঁজ নেয়নি; তবে আমা’র বন্ধুরা আমা’র পাশে থেকেছে সব সময়। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্সের ফলাফলে বি-ইউনিটে মেধাতালিকায় হয়েছি ১১তম। ১২তম বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিসে হয়েছি ৬৭তম। ১০০ জন উত্তীর্ণ হয়েছিল। এর মধ্যে নিয়োগ হয়েছে ৯৭ জনের। তিনজন পু’লিশ ভেরিফিকেশনে বাদ পড়েছেন।

আগামী মঙ্গলবার পিরোজপুর জে’লার সহকারী জজ হিসেবে যোগদান করবো জানিয়ে তিনি বলেন, আমা’র বড় লোক হওয়ার কোনো ইচ্ছে নেই। সব সময় ন্যায়ের পথে থেকে মানুষের জন্য কাজ করে যাব। কখনও অনিয়ম বা দু’র্নীতির সঙ্গে জ’ড়িত হবো না। যখন চাকরিজীবন শেষ করবো তখন যেন অ’বৈধ উপায়ে উপার্জনের একটি টাকাও আমা’র ব্যাংক একাউন্টে না থাকে। আমা’র কাছে সব মানুষ ন্যায়বিচার পাবে। অসহায় মানুষরা কখনই ন্যায়বিচার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হবে না।

দুস্থ পরিবারের সমস্যাগুলো আমি বুঝি, জানিয়ে গরিব মেধাবী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে গোলাম রসুল সুইট বলেন, টাকা-পয়সা লেখাপড়ার পথে কোনো বাধা নয়। ইচ্ছাশক্তি থাকলে সে এগিয়ে যাবেই, পথ বেরিয়ে যাবেই।

সুইটের বাবা মোশারফ হোসেন জানান, রাজধানীর উত্তরার ৯ নম্বর সেক্টরে আট বছর সিকিউরিটি গার্ডের কাজ করেছি। আম’রা স্বামী-স্ত্রী’ দুজনই থাকতাম। স্ত্রী’ অন্যের বাড়িতে কাজ করতো। এক মাস আগে ছেলে চাকরিটা ছেড়ে দিতে বলেছে। তাই চাকরি ছেড়ে বাড়িতে চলে এসেছি। ছেলে বলেছে, আমি এখন চাকরি পেয়েছি আপনার কাজ করতে হবে না। ভাবছি, এলাকায় ছোট একটি দোকান দিয়ে ব্যবসা করবো।

অন্যের বাড়িতে কাজের বুয়া থাকাকালীন সময়ে সেসব কথা মনে করে কেঁদে ওঠেন মা মাহফুজা খাতুন। আবেগাপ্লুত হয়ে তিনি বলেন, মানুষের বাড়িতে কাজ করতাম। স্বামী আর আমা’র টাকা দিয়েই চলতো সংসার আর দুই ছেলের খরচ। আম’রা যেটুকু পেরেছি সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি ছেলের লেখাপড়া করানোর জন্য। দোয়া করেছি। আল্লাহ্ আমাদের ডাক শুনেছেন। দোয়া কবুল করেছেন। আমি অনেক খুশি। এখন সব মানুষের কাছে আমা’র ছেলের জন্য দোয়া চাই।

গোলাম রসুল সুইটের বাল্যবন্ধু জাবিরুল ইস’লাম বলেন, ছোটবেলা থেকেই শান্ত ও মেধাবী ছিল রসুল। আম’রা একসঙ্গেই লেখাপড়া করতাম। কখনও কারও সঙ্গে সে জো’র গলায় কথা বলেছে, আমাদের জানা নেই।

দেবহাটার পারুলিয়ার ইউনিয়ন পরিষদের স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল আলীম বলেন, খুব অভাবি ছিল তাদের পরিবার। জমি জায়গা কিছুই নেই। মা-বাবা খুব ক’ষ্ট করে ছেলেটাকে লেখাপড়া শিখিয়েছে। ছেলেটাও খুব ভালো। জজের চাকরি পেয়েছে। এতে এলাকার সব মানুষ খুশি হয়েছে।

আলোকিত সংবাদ/এমআরকে

বাংলাদেশে কোরোনা

সর্বশেষ (গত ২৪ ঘন্টার রিপোর্ট)
আক্রান্ত
মৃত্যু
সুস্থ
পরীক্ষা
সর্বমোট

বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস

বাংলাদেশে

আক্রান্ত
সুস্থ
মৃত্যু

বিশ্বে

আক্রান্ত
সুস্থ
মৃত্যু
Exim Bank

নামাজের সময়সূচি

সোমবার ২৯শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং
ফজর ৪:২৬
জোহর ১১:৫৬
আসর ৪:৪১
মাগরিব ৬:০৯
ইশা ৭:২০
সূর্যাস্ত : ৬:০৯সূর্যোদয় : ৫:৪৩
DHAKA WEATHER

আর্কাইভ

April 2024
M T W T F S S
« Mar    
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930  

শিরোনাম

শিরোনাম গজারিয়ায় মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীকে হুমকি,থানায় অভিযোগ শিরোনাম বালুচরের নৌকায় ভোট চাইলেন শ্রীনগরের ১৩ চেয়ারম্যান শিরোনাম মুন্সীগঞ্জ-১ আসনের দলীয় মনোনয়নপত্র জমা দিতে দুই উপজেলা নেতাকর্মী নিয়ে মহিউদ্দিন আহমেদের যাত্রা শিরোনাম মাহাত্মা গান্ধী ইন্টারন্যাশনাল পীস অ্যাওয়ার্ড পেলেন সিরাজদিখানের কৃতিসন্তান (অবঃ) মেজর মোহাম্মাদ আখতার হোসেন শিরোনাম সিরাজদিখানে উঠান বৈঠক অনুষ্ঠিত  শিরোনাম বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারে সুপারিশ প্রাপ্ত হলেন সিরাজদিখানের কৃতি সন্তান মোঃ সাইফুল ইসলাম। শিরোনাম ৪১ তম বি‌সিএস পরীক্ষায় সিরাজ‌দিখা‌নের দুই জন চুড়ান্তভা‌বে সুপা‌রিশপ্রাপ্ত শিরোনাম বালুচর  ইউনিয়ন পরিষদের উন্মুক্ত বাজেট ঘোষণা শিরোনাম সিরাজদিখানে বাড়ির উঠান থেকে মটর সাইকেল চুরি শিরোনাম সিরাজদিখানে জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জেরে মারধর, মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানীর অভিযোগ
error: Content is protected !!