স্টাফ রিপোর্টার- রাজধানী ঢাকা , নারায়নগঞ্জে ও মাদারীপুর করোনা ভাইরাসের রোগী সনাক্ত হওয়ার খবর মধ্যবর্তী জেলা মুন্সীগঞ্জের ৬টি উপজেলায় করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। মুন্সীগঞ্জের সিভিল সার্জন ডাঃ আবুল কালাম আজাদ গতকাল সোমবার জেলাবাসীকে ঢাকা ও নারায়নগঞ্জ জেলায় যাতায়াত না করতে অনুরোধ করেছে। এদিকে গতকাল সোমবার গজারিয়া উপজেলার লক্ষীপুরা গ্রামে পুলিশ সদস্যসহ দুই জন করোনা ভাইরাস আক্রান্ত সন্দেহে ২০টি বসতবাড়ি লকডাউন করা হয়েছে। অপরদিকে টঙ্গিবাড়ী উপজেলার ৩টি গ্রামের ৬টি বসতবাড়ি লকডাউন করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এ অবস্থায় মুন্সীগঞ্জের সুশীল সমাজসহ বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ এখনই মুন্সীগঞ্জ জেলাকে লকডাউন ঘোষনা করার দাবী জানিয়েছে। তাদের মতে, দিন দিন পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিতে যাচ্ছে। মাদারীপুর ও নারায়নগঞ্জের মাঝে মুন্সীগঞ্জ জেলার অবস্থান। যেহেতু উত্তর ও দক্ষিনের জেলায় ১১ জন করে করোনায় আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে, তার প্রভাব মুন্সীগঞ্জ জেলায় পড়ার সম্ভাবনাই বেশী।
মুন্সীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক নাগরিক সময়ের সম্পাদক তানভীর হাসান বলেছেন, মুন্সীগঞ্জকে বিশেষ করে আমি মুন্সীগঞ্জের একজন নাগরিক হিসেবে মুন্সীগঞ্জকে লকডাউন করা জরুরি হয়ে পড়েছে। কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, মুন্সীগঞ্জ জেলার উপর দিয়ে দুইটি মহসড়কের সীমানা রয়েছে, একাধিক নদী পথ রয়েছে যা অরক্ষিত। এই পদ গুলো দিয়ে মানুষের যত্রতত্র যাতায়ত করার সুযোগ রয়েছে।
মুন্সীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি শহীদ-ই-হাসান তুহিন বলেন, বিশ্ব আজ তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের কবলে। ঢাকায় ৫৪ জন, নারায়নগঞ্জে ১১ জন ও মাদারীপুরে ১১ জন করোনা আক্রান্ত রোগী হওয়ায় মুন্সীগঞ্জ জেলা এখন মারাত্বক ঝুঁকির কবলে। তাই এখনই মুন্সীগঞ্জকে লকডাউনের আওতায় নেওয়া জরুরী হয়ে পড়েছে।
গজারিয়ায় যেভাবে ২০ বাড়ি লকডাউনে
গজারিয়া পুলিশ জানিয়েছে, গজারিয়া উপজেলার লক্ষীপুরা গ্রামের তোফাজ্জল হোসেনের মেয়ের জামাই মো: ইয়াসিন মিয়া গত ৪দিন আগে জ¦র, হাঁচি, কাঁশি নিয়ে নারয়ণগঞ্জের বন্দর এলাকার রসুলবাগের ভাড়াবাসা থেকে গজারিয়ার ভবেরচর ইউনিয়নের লক্ষীপুর গ্রামের শ্বশুড়বাড়ীতে আত্মগোপন করেন। স্থানীয়রা বিষয়টি বুঝতে পেরে তাকে নিজ বাড়ি রেখে শ্বশুড় বাড়িতে রাখার কারণ জানতে চাইলে তার সুদুত্তর না দিয়ে কৌশলে পালিয়ে যান। তার বাড়ি গজারিয়া উপজেলার ইমামপুর ইউনিয়নের কালীপুরা গ্রামে বলে জানা গেছে। এদিকে গ্রামবাসীর তৎপরতায় ইয়াসিন মিয়া পালিয়ে গেলেও গতকাল সোমবার রাত ৮টা পর্যন্ত তার কোন সন্ধান পায়নি উপজেলা প্রশাসন। অপরদিকে ভবেরচর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডে লক্ষীপুরা দক্ষিণ মহল্লার বাসিন্দা নারায়ণগঞ্জের চাঁষাড়া পুলিশ ফাঁড়ির এক কনষ্টেবল জ¦র ও কাশি নিয়ে গত সপ্তাহে ১৫ দিনের ছুটি নিয়ে স্বপরিবারে গ্রামের বাড়ি এসেছেন।
গজারিয়া থানার ওসি মো. ইকবাল হোসেন জানান, সন্দেহভাজন ইয়াছিন মিয়ার অবস্থার কারনে তার শ্বশুড় তোফাজ্জল মিয়ার বাড়িসহ ১০টি বসতবাড়ি ও পুলিশ কনস্টেবল নজরুল ইসলামের বাড়িসহ আশেপাশের ১০টিসহ মোট ২০টি বসতবাড়ি লকডাউনে রাখা হয়েছে।
টঙ্গিবাড়ীর ৬ বাড়ি বাঁেশর প্রাচীরে ঘেরা
অন্যদিকে রাজধানীর কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত দুদক কর্মকর্তা আবু সাঈদের মৃত্যুর ঘটনায় গতকাল সোমবার দুপুরে মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ি উপজেলার ৩টি গ্রামের ৬ পরিবারকে কোয়ারেন্টাইনে নেওয়া হয়েছে। ওই ৬ পরিবারের বাড়িঘরে নজরদারিতে রেখেছে প্রশাসন। পরিবার গুলোর সদস্যদের সঙ্গে বাইরের সবার যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বাইরের কারো সঙ্গে মেলামেশা করতে পারবে না ওই পরিবারগুলো। সেখানকার ২ জন নারী-পুরুষের নমুনাও সংগ্রহ করা হচ্ছে। এরা হচ্ছেন- করোনা আক্রান্ত নিহত আবু সাঈদের ভাগ্নে ঢুলীহাটা গ্রামের সুলতান মীরধা ও খালা তাসলিমা খাতুন। এদের নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তার বক্তব্য
টঙ্গিবাড়ি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মোসাম্মৎ হাসিনা আক্তার সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, ঢাকার কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে করোনায় নিহত আবু সাঈদের সঙ্গে সংস্পর্শে আসার কারনে টঙ্গিবাড়ি উপজেলার আড়িয়লের ফারুক মাদবর, ঢুলীহাটা গ্রামের সুলতান মীরধা ও তাসলিমা খাতুন এবং আমতলী গ্রামের শামীম শেখ, বারেক শেখ ও আক্কাস শেখের পরিবারের সদস্যদের নজরদারীতে আনা হয়েছে। তিনি আরও জানান, এ সব পরিবারের বাড়ি-ঘরের চারপাশে বাঁশের প্রাচীর দিয়ে আটক দেওয়া হয়েছে। যাতে বাইরে থেকে তাদের সঙ্গে কেউ মেলামেশা না করতে পারে ও পরিবার গুলোর সদস্যরা কেউ বাইরে যেতে না পারেন। ওই পরিবার গুলোর মধ্য থেকে দুইজনের নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় প্রেরনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পরিবার গুলোর মাঝে খাদ্য সামগ্রী সরবরাহ করা হয়েছে।
সিভিল সার্জন বললেন
মুন্সীগঞ্জের সিভিল সার্জন ডাঃ আবুল কালাম আজাদ বলেছেন, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে নারায়নগঞ্জে ২ জনের মৃত্যু এবং ১১ জন আক্রান্ত হওয়া এবং মাদারীপুরে ১১ জন আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায় পাশের জেলা হওয়ায় ম্ন্সুীগঞ্জও ঝুঁকিতে পড়েছে। এই প্রেক্ষাপটে মুন্সীগঞ্জ শহর ও শহরাঞ্চলের মানুষকে আপাতত ঢাকা, নারায়নগঞ্জ ও মাদারীপুর জেলায় যাতায়াত বন্ধ করার অনুরোধ করেছে। করোনা ভাইরাস নিয়ে জেলার সার্বিক অবস্থা প্রসঙ্গে সিভিল সার্জন আরও বলেন, মুন্সীগঞ্জে করোনা সনাক্ত হয়নি বলে আগামী দিনগুলোতে হবে না তার কোন নিশ্চয়তা নেই। কেননা, গত তিন দিনে ২৬ জনের নমুনা পাঠানো হয়েছে । প্রথম ধাপে ৭ জনের নমুনার ফলাফল আজ সোমবারই আসার কথা ছিল। এখনো আসেনি, পজেটিভ রিপোর্ট হলে আমাদের তাৎক্ষনিক জানিয়ে দেয়া হতো, ধারণা করা হচ্ছে, পজেটিভ আসবে না।
জেলা প্রশাসকের বক্তব্য ও প্রশাসনের প্রস্তুুতি
মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. মনিরুজ্জামান তালুকদার জানিয়েছেন, কেভিড-১৯ নিয়ে মুন্সীগঞ্জ জেলার চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রস্তুুতি গ্রহণ করে রেখেছে জেলা প্রশাসন। এর মধ্যে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল মিলিয়ে বেডে সংখ্যা ৬৫০টি। এর মধ্যে এর মধ্যে কোভিড-১৯ চিকিৎসায় প্রস্তুুতকৃত বেডের সংখ্যা সরকারি ৩০টি ও বেসরকারি ১২টি প্রস্তুুত রাখা হয়েছে। সরকারি হাসপাতালের ডাক্তারের সংখ্যা ৭৬ জন ও নার্সের ১৪৬ জন, বেসরকারি হাসপাতালে ডাক্তারের সংখ্যা ৬২ জন, নার্সের সংখ্যা ৯২ জন। এছাড়া ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) মজুদ রয়েছে ৯২২টি এবং বিতরণ করা হয়েছে ১ হাজার ৪৭৬টি। অন্যদিকে কোভিড-১৯ আক্রান্ত ব্যক্তির জরুরি চিকিৎসায় স্থানান্তরের নিমিত্তে ১টি অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে এবং চিকিৎসা কেন্দ্রের জরুরি বিভাগে আইসোলেসন ব্যবস্থা রয়েছে ৬টি।
Post Views:
৩৮১