চাঁদে ‘বাড়ি’ বানানোর কাজ কতদূর?
মানুষের মুখে প্রায়ই শোনা যায়, চাঁদ নিয়ে নানা কথা। সত্যিই, ঢাকায় রাস্তায় বসে চাঁদের চিন্তা...
প্রকাশিত: ৬:১৩ অপরাহ্ণ, ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২০
ছবি: আলোকিত সংবাদ
কোন ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেলে বা অবসায়িত হলে সবার আগে টাকা ফেরত পাবেন ব্যক্তিশ্রেণির আমানতকারীরা।ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী, ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অবশিষ্ট সম্পদ হতে সকল আমানতকারীর পাওনা পরিশো’ধ করা হবে। এরপর ফেরত দেয়া হবে বন্ড ইস্যুকারী বন্ডহোল্ডার ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের টাকা। এরপরও যদি টাকা থাকে তবে সেখান থেকে কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালক ও শেয়ারহোল্ডার টাকা ফেরত পাবেন। এছাড়া বীমা তহবিল থেকে ৬ মাসের মধ্যে ২ লাখ টাকা ফেরত পাবেন সকল আমানতকারী।এমন বিধান রেখে ‘আমানত সুরক্ষা আইন’ এর প্রস্তাবনা তৈরি করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, এ আইনের ফলে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আমানতকারীগণ সুরক্ষিত হবেন। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে গুজব ছড়াচ্ছে একটি স্বার্থান্বেষী মহল। যা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।জানা যায়, ব্যাংক কোম্পানি আইনের ৭৪ ধারায় বলা আছে, আদালত কোন ব্যাংকের অবসায়নের আদেশ দিলে ৩ মাসের মধ্যে সরকারী অবসায়ক আমানতকারী ও আমানতের তালিকা বীমা ট্রাস্টি বোর্ডের কাছে দাখিল করবে। সে মোতাবেক সবার আগে টাকা ফেরত পাবেন ব্যক্তিশ্রেণির আমানতকারীরা। ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী, ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অবশিষ্ট সম্পদ হতে সকল আমানতকারীর পাওনা পরিশো’ধ করা হবে। এরপর ফেরত দেয়া হবে বন্ড ইস্যুকারী বন্ডহোল্ডার ও প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের টাকা। এরপরও যদি টাকা থাকে তবে সেখান থেকে কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালক ও শেয়ারহোল্ডার টাকা ফেরত পাবেন।জানতে চাইলে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষক ড. জায়েদ বখত বলেন, যখন কোন ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে যায়, তখন লিক্যুইডেটর নিয়োগ দিতে হয়। তার কাজ ব্যাংকের সম্পদ কেমন আছে তার খোঁজ নিয়ে আমানতকারীদের পাওনার একটি তালিকা করা। সেই তালিকা অনুযায়ী প্রথমে ছোট আমানতকারী ও পরে বড় আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেয়া হয়। কে কোন মাসে কী পরিমাণ আমানত পাবেন সেটাও নির্ধারণ করে দেয়া হয়।বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী, কোন ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেলে বা অবসায়িত হলে সবার আগে ব্যক্তিশ্রেণির আমানতকারীদের টাকা পরিশো’ধ করা হবে। তারপর ফেরত দেয়া হবে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের টাকা।অন্যদিকে ‘আমানত সুরক্ষা আইন’ অনুযায়ী, বীমা তহবিল থেকে ৬ মাসের মধ্যে ২ লাখ টাকা ফেরত পাবেন সকল আমানতকারী। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে গুজব ছড়াচ্ছে একটি স্বার্থান্বেষী মহল। যা বিভ্রা’ন্তি সৃষ্টি করছে।বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, আইন অনুযায়ী আমানতকারীরা সবার আগে টাকা ফেরত পাবেন। এদের মধ্যে প্রথমে ব্যক্তিশ্রেণির আমানতকারী, তারপর বন্ড ইস্যু হয়ে থাকলে বন্ডহোল্ডাররা, এরপর পাবেন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী। তারপর কিছু থাকলে পাবেন উদ্যোক্তা পরিচালক ও কোম্পানির শেয়ারহোল্ডাররা। কারণ শেয়ারহোল্ডাররা মালিক, সবাইকে দিয়ে কিছু থাকলে তারা পাবেন।তিনি বলেন, আমানতকারীদের পাওনা টাকার চেয়ে যদি আমানতের পরিমাণ কম থাকে ওই কম টাকাই ভাগ করে দেয়া হবে। কারণ কোম্পানিটি লিমিটেড লায়াবিলিটি, ফলে শেয়ারহোল্ডাদের দায় শেয়ারহোল্ডিং পর্যন্ত। শেয়ারহোল্ডাররা প্রয়োজনে কোন অর্থ পাবেন না, কিন্তু নেগেটিভ দায় নিতে হবে না। অর্থাৎ আমানতকারীর পাওনা অনুযায়ী পরিশো’ধ করার মতো অর্থ না থাকলেও উদ্যোক্তাদের বাড়তি কোন অর্থ পরিশো’ধ করতে হবে না। তবে কোম্পানি থেকে কেউ ঋ’ণ নিয়ে থাকলে তা উদ্ধার করে আমানতকারীদের ফেরত দিতে হবে।আবু আহমেদ বলেন, সরকার চাইলে আমানতকারীদের ভর্তুকি দিয়ে পুরো টাকা পরিশো’ধ করতে পারে।জানা গেছে, ব্যাংকের আমানতের সুরক্ষা দিতে ১৯৮৪ সালে সর্বপ্রথম একটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়। অধ্যাদেশকে ২০০০ সালে ব্যাংক আমানত বীমা আইন ২০০০-এ পরিণত করা হয়। এতে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আমানত এ আইনের বাইরে ছিল। ২০১৭ সালে আইনটি সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়। এ আইনের খসড়া করা হয়েছে। এবার ‘আমানত সুরক্ষা আইন-২০২০’ খসড়ায় আমানতকারীদের ক্ষ’তিপূরণের অর্থের পরিমাণ বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনা করছে সরকার।প্রচলিত বিধান অনুযায়ী, কোন ব্যাংক বন্ধ হয়ে গেলে আমানতকারীরা ক্ষ’তিপূরণ বাবদ সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা পাবে। এই অর্থের পরিমাণ বাড়িয়ে সর্বোচ্চ ৬ মাসের মধ্যে আমানতকারীদের ২ লাখ টাকা ক্ষ’তিপূরণ দেয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে। আমানত সুরক্ষা আইন-২০২০’র খসড়া নিয়ে সমালোচনার মুখেই এমন চিন্তা করছে অর্থ মন্ত্রণালয়।সংশোধিত খসড়া আইন অনুযায়ী, ব্যাংক বন্ধ হয়ে গেলে আমানতকারী সর্বোচ্চ ৯০ দিনের মধ্যে ২ লাখ টাকা পাবেন। তিনি ২ লাখেরও বেশি টাকা ব্যাংকে জমা রাখলেও ২ লাখ টাকাই পাবেন। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংক কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে অর্থ মন্ত্রণালয়। ওই বৈঠকে এ সংক্রান্ত প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকে উপস্থিত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ব্যাংকিং কোম্পানি আইন ১৯৯১ অনুযায়ী, বীমা করা অর্থের বাইরে যে আমানত রয়েছে, তা বন্ধ হয়ে যাওয়া ব্যাংকের সম্পদ বিক্রি করে পরিশো’ধ করা হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, দু-একদিনের মধ্যে খসড়া আইনের সংশোধিত কপি ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে।জানতে চাইলে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন এ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ইস্টার্ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী রেজা ইফতেখার বলেন, আইন অনুসারে আমাদের চলতে হবে। তবে আমানতকারীদের যত বেশি অর্থ সুরক্ষিত হবে, আমানতকারীরা তত বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন। তাই বীমা আওতায় আনার পরিমাণটা বাড়ানো যুক্তিযুক্ত হবে।
জানা যায়, বর্তমানে ব্যাংকগুলোতে আমানতকারীদের গচ্ছিত অর্থের পরিমাণের ওপর ০.০৮ থেকে ০.১০ শতাংশ হারে বীমার প্রিমিয়াম দিতে হয়। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে দেখা যায়, কেন্দ্রীয় ব্যাংক পরিচালিত ডিপোজিট ইন্স্যুরেন্স ট্রাস্ট ফান্ডে (ডিআইটিএফ) টাকার পরিমাণ ৭ হাজার ৪৩০ কোটিতে পৌঁছেছে, যা এর আগের বছরের তুলনায় ১৬.০৩ শতাংশ বেশি। গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পাওয়া হিসাব অনুযায়ী, ১০ কোটি ২৮ লাখ এ্যাকাউন্টে আমানতের পরিমাণ ১১ লাখ ৫৯ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা।বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা জমা রাখা আমানতকারীদের এ্যাকাউন্টের মধ্যে ৯০ শতাংশই আমানত সুরক্ষা বীমার অধীনে আছেন। কিন্তু সরকার যদি ১ লাখ টাকার বদলে ২ লাখ টাকা পরিশো’ধের নিয়ম করে, তাহলে বীমা করা এ্যাকাউন্টের পরিমাণ ৯০ শতাংশ থেকে বেড়ে ৯৬ শতাংশে দাঁড়াবে।বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, এ ধরনের বিধান কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আগেই ছিল। কোন ব্যাংক অবসায়ন হলে ওই ব্যাংকের গ্রাহকদের ক্ষ’তিপূরণ ১ লাখ টাকা দেয়ার বিধান ছিল। এ আইনটি মূলত ছোট আমানতকারীদের সুরক্ষা দেয়ার জন্য। সুরক্ষা আইনে গ্রাহকের লাভক্ষ’তির বিষয়ে প্রশ্নে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক এই গভর্নর বলেন, বড় গ্রাহকরা তার টাকার সুরক্ষার জন্য নিজেরা কিছু করছেন না। এটি ব্যাংকের পক্ষ থেকে বীমা করে করা হচ্ছে। যে কারণে বড়দের নিয়ে ব্যাংকগুলো সেভাবে ভাবছেও না।আমানত সুরক্ষা আইনের খসড়ায় আরও বলা হয়েছে, এর অধীনে কোন কার্যক্রমের ব্যত্যয় ঘটলে দায়ী ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তির বিরু’দ্ধে মামলা বা ফৌজদারি আইনে কোন ব্যবস্থা নেয়া যাবে না। আর কোন ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান পরপর দু’বার বীমার প্রিমিয়ামের অর্থ পরিশো’ধে ব্যর্থ হলে গ্রাহকের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ করতে পারবে না। টানা দুইয়ের অধিক প্রিমিয়াম দিতে ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে অবসায়ন করা হবে। গ্রাহকদের ক্ষ’তিপূরণ দিতে, তহবিল পরিচালনা ও প্রশাসনের জন্য আমানত সুরক্ষা আইনের আওতায় বাংলাদেশ ব্যাংকে ট্রাস্ট তহবিল নামে একটি তহবিল গঠন করা হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালকরা এ তহবিলের ট্রাস্টি বোর্ড হবেন। এ তহবিলে বীমাকৃত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে যে অর্থ পাওয়া যাবে তা জমা রাখা হবে।এছাড়া কোন ক্ষেত্রে এ তহবিলের টাকা বিনিয়োগ করলে সেখান থেকে যে আয় আসবে, সেটিও তহবিলে জমা রাখা হবে। খসড়া আইনের বিধানে বলা হয়, কোন ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান অবসায়নের পর তার আমানতকারীদের যে অর্থ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ট্রাস্ট তহবিল পরিশো’ধ করবে, সেটি সংশ্লিষ্ট দেউলিয়া হওয়া ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিট সম্পদের বিপরীতে যে তারল্য থাকবে তা সমন্বয় করা হবে।এখানে অবসায়ন বলতে কোন কোম্পানি কার্যক্রম গুটিয়ে ফেলা, বন্ধ করা এবং দায়দেনা নি’ষ্পত্তি করাকে বোঝায়। আইনটি প্রবর্তনের পর প্রত্যেক প্রতিষ্ঠিত তফসিলী ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ট্রাস্ট তহবিলের সঙ্গে বীমাকৃত হবে। এছাড়া প্রত্যেক বীমাকৃত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান তাদের আমানতের অংশের ওপর প্রতি বছর এ তহবিলে প্রিমিয়াম প্রদান করবে। এটি কেন্দ্রীয় ব্যাংক সময় নির্ধারণ করে দেবে।তবে এক্ষেত্রে সরকারের অনুমতি নিয়ে প্রিমিয়ামের হার কম-বেশি করতে পারবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান তাদের ব্যয় খাত থেকে প্রিমিয়ামের অর্থ পরিশো’ধ করবে।
আলোকিত সংবাদ/এমআরকে
ফজর | ৪:২৬ |
জোহর | ১১:৫৬ |
আসর | ৪:৪১ |
মাগরিব | ৬:০৯ |
ইশা | ৭:২০ |
শিরোনাম