বৃহস্পতিবার ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং , ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৯শে জমাদিউল-আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরী

সম্পর্কের ওঠা-নামা

নিজস্ব প্রতিবেদক  আলোকিত সংবাদ

 প্রকাশিত: ৫:০১ অপরাহ্ণ, ৮ মে, ২০২০

ছবি: আলোকিত সংবাদ

সম্পর্ক এক অতিশয় সূক্ষ্ম জিনিস। না দেখা সুতোয় বাঁধা। পারস্পরিক আচার আচরণে শ্রীবৃদ্ধি আর শ্রীহীন হয় সম্পর্কের। শ্রীবৃদ্ধি হবার পেছনে মূল চালিকাশক্তি স্বার্থত্যাগ। আর শ্রীহীন হওয়ার পেছনে কারণ স্বার্থবাদ।

স্বার্থ এক মারাত্মক জিনিস। স্বার্থ ছাড়া মানুষ নেই। স্বার্থের কারণেই সভ্যতা, উন্নয়ন, অগ্রযাত্রা। কাজেই এটাকে খারাপ চোখে দেখারও কিছু নেই। তবে কারো কারো স্বার্থচিন্তা প্রকট, সেটা অবশ্যই নিন্দনীয়।

শাশুড়ি বউ সম্পর্কের তিক্ততা নিয়ে সবচেয়ে বেশি কথা হয় সমাজে। শাশুড়ি বউকে সহ্য করতে পারছেন না। বউ-এর প্রতিটি চলনে বলনে কাজে খুঁত ধরছেন। চেঁচিয়ে বাড়ি মাথায় করছেন। ছেলের সাথে বউ-এর ভালো সম্পর্ক মানতে পারছেন না। তাদের একসঙ্গে ঘুরাঘুরি খুনসুটি সইতে পারছেন না। প্রতিটি কাজ নাক গলাচ্ছেন।  তার হয়ত ছেলের বউ নিয়ে অনেক আশা ছিল। ভেবেছিলেন বিয়ের সময় তাদের সঠিক মূল্যায়ন করা হবে। হয়নি। তার মনে হচ্ছে ঠকানো হয়েছে তাদের ভালোমানুষির সুযোগ নিয়ে। সে দুঃখ মনে রয়ে গেছে। তাছাড়া তার হয়ত মনে হচ্ছে বউয়ের বাবা-মা তাদের সংসারে বড় বেশি নাক গলাচ্ছেন। সব রাগ গিয়ে পড়ছে ছেলের বউয়ের উপর। অন্যদিকে শাশুড়ি বউয়ের দুচোখের বিষ। জগদ্দল পাথরের মতো মাথায় চেপে বসে আছে শাশুড়ি। তার খাবার বানাতে ইচ্ছ করে না বউয়ের। এটা তার বাড়তি খাটুনি। তার কাপড় ধুতে ইচ্ছে করে না। ইচ্ছে করে না দুবেলা দু কাপ চা দিতে। এমন অনেক কিছু।

এছাড়াও সম্পর্কের অবনতি আরো কারণ আছে। শাশুড়ি হয়তো চাইছেন বউটা তার সঙ্গে গল্প করুক, দুদন্ড তার পাশে বসুক, তাকে খানিকটা সময় দিক। তিনি ওষুধ খেয়েছেন কিনা জিজ্ঞাসা করুক। চুল বেঁধে দিক। ঘর-বাড়ি সুন্দর করে গুছিয়ে রাখুক। এমন ছোট ছোট চাওয়া। এসব বালাই বউয়ের মধ্যে নেই। সে মাসে একবার শাশুড়ির কাছেও ঘেঁষে না। আবার বউও হয়ত চাইছে শাশুড়ি বলুক, যাও তোমরা সিনেমা দেখে এসো, ঘুরে এসো। এসব শাশুড়ির মধ্যে নেই। এসব কাহিনি নিয়ে কত গল্প কত উপন্যাস কত সিনেমা। বাংলা সাহিত্যের অনেকাংশ জুড়েই তো এসব। পশ্চিম বাংলার সিরিয়ালগুলোতে এখনো মার মার কাট কাট হয়ে চলছে এসব গল্প।

আমার এক আত্মীয়ার খুব দুঃখ ছিল, ছেলের বউ ছেলেকে খুব খাটায়। দিন শেষে শ্রান্ত ক্লান্ত হয়ে ছেলে যখন বাড়ি ফেরে বউ তখন হাজারটা কাজ তার জন্য জমিয়ে রাখে। ছেলে এসে বিশ্রামের সুযোগ পায় না। ওই কাজগুলো তাকে করতে হয়। বউ তখন হয় ফেসবুকিং করে নাহলে নখে নেলপলিস লাগায়। তিনি বলতেন, ‘ছেলেটার কষ্ট দেখে সহ্য হয় না। মরেও শান্তি পাবো না।’ আমার সেই আত্মীয়া মনে অনেক দুঃখ নিয়ে চলে গেছেন। এখন বউ তার ছেলেকে কতটা খাটাচ্ছে জানার কোনা উপায় নেই আমাদের। তবে তার হাহাকারটা আজও বুকে বড় বাজে। বউমার সঙ্গে তার আর কোনো সমস্যা ছিল না। ছেলের বউকে মেয়ের মতোই দেখতেন। সমস্যা ওটাই ছেলেকে গাধার খাটুনি খাটানো। বউটা যদি একটু বিবেচক হতো, শাশুড়ির মনটা বুঝতো তাহলে শাশুড়িকে এত কষ্ট বুকে নিয়ে চলে যেতে হতো না।

আসলে আমরা কখনই স্বামীকে দিয়ে ঘরের কাজ করানোর কথা ভাবতাম না। স্বামী হয়ত কখনও শখ করে সবজি খিচুড়ি রেঁধেছে। সে হয়ত তিনবছরে একদিন। কিন্তু নিয়মিত রান্নাঘরের কাজ করানো, থালাবাটি ধোয়ানো, রান্না করানো এসব কখনই না। ভাবিওনি কখনো। আমরা চাকরি করেছি, সংসার সামলেছি, বাচ্চা সামলেছি এক হাতে। আমি বলছি না স্বামী বসে থাকবে রাজাধিরাজের মতো আর স্ত্রী খেটে মরবে। কখনই না। স্বামীরও বিবেচক হতে হবে। তারও স্ত্রীকে সাহায্য করতে হবে। তবে অবশ্যই বাধ্যতামূলকভাবে নয়। যে মা তার ছেলেকে দিয়ে কখনোই এসব কাজ করাননি, তিনি যখন চোখের সামনে ছেলেকে বাসন মাজতে বা রান্না করতে দেখেন আর বউকে গড়াতে দেখন তখন তার খারাপ লাগে। আর খারাপ লাগে বলে বউয়ের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হয়। ছেলেকে বলে প্রতিকার পান না বলে তার সঙ্গেও সম্পর্ক নষ্ট হয়। কোনো কোনো মা প্রকাশ্যে এসব বলেন। দিনের পর দিন ঝগড়াঝাটি হয়। কোনো মা বলেনন না পারিবারিক অশান্তির ভয়ে। কোনো মা দু একবার বলে থেমে যান। নিজের মধ্যে গুমরে মরেন। আস্তে আস্তে দূরত্ব বাড়ে, সে দূরত্ব এতটাই বাড়ে যে আর কখনোও কমানো যায় না।

সম্পর্কের ক্ষেত্রে এক্সপ্রেশন বা প্রকাশ একটা বড় বিষয়।  আজকালের মডার্ন শাশুড়ি হয়ত দিনের পর দিন বউমার প্রশংসা করছেন। তাকে প্রশংসা করে ফেসবুকে পোস্ট দিচ্ছেন। বিনিময়ে তিনি চাইছেন বউমাও তার একটু প্রশংসা করুক। সেটা হচ্ছে না। তিনি যা লিখছেন তা বউমা হয়ত পড়ছেনও না। মন ভেঙে যাচ্ছে শাশুড়ির। অন্যদিকে বউমার ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটছে। বউ যতই শাশুড়ির মন পাবার জন্য এটা ওটা করছে, শাশুড়ি খুশি হচ্ছে না কিছুতেই। মনে ভেঙে যাচ্ছে বউ-এর।

শাশুড়ি বউয়ের সম্পর্ক যেমন ডেলিকেট তেমনই ডেলিকেট শাশুড়ি জামাই সম্পর্ক। বাংলায় ‘জামাই আদর’ বলে একটা কথা আছে। জামাই দেখছেন শ্বশুরবাড়িতে তার আদর যত্ন হচ্ছে না, অন্য দশজন যা খায় তাই খাওয়ানো হচ্ছে। জন্মদিনে গিফট জুটছে না। শাশুড়ি শ্বশুর বাবা বাবা করছে না। অন্যদিকে শাশুড়ি দেখছেন জামাইটা যেন কেমন। শাশুড়ি বলে যে একটু বাড়তি শ্রদ্ধা, দুহাতে এটা ওটা নিয়ে আসা তাতো কই হচ্ছে না। তিনি চেয়েছিলেন জামাই তার ছেলের বিকল্প হবে। বাজার করবে, ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবে, সব দেখা শুনা করবে। তার বালাই নেই। বরফ জমতে থাকে সম্পর্কে।

সবচেয়ে জটিল আর কঠিন সম্পর্ক ভাবি-ননদ। ভাবি ননদের কুটকাচালি নিয়ে গল্প সিনেমার ছড়াছড়ি। ভাই হয়ত নতুন বউয়ের জন্য একটা শাড়ি কিনে এনেছে। শাশুড়ি ভাইয়ের হাত থেকে তা ছিনিয়ে নেয়। এরপর বসে সালিশ। ভাবি যেমন ননদকে সহ্য করতে পারে না, ননদ পারে না ততোধিক। ননদ ভাবে, এই মেয়েটার জন্য তার ভাই পর হয়ে গেল। আর ভাবি ভাবে, এই মেয়েটা বিদায় হলে বাঁচি। নিজের মতো করে সুখে সংসার করতে পারি। ননদিনী সংসারে এমনই ভয়ের জিনিস যে তার নাম হয়েছে ‘রায়বাঘিনী।’

এতো গেলো আত্মীয়তা বা রক্তের সম্পর্কের কথা। এর বাইরেও সম্পর্ক আছে। বন্ধুত্বের, সামাজিক সম্পর্ক। আসলে সব সম্পর্কই লালন করতে হয়। পরিচর্যায় যেমন গাছ বাড়ে, পরিচর্যায় সম্পর্কও বাড়ে। আপনি একদিন দুদিন তিনদিন একজনের খবর নিলেন সে নিলো না, ও সম্পর্ক টিকবে না। একজন দু’দিন তিন দিন আপনার বাড়িতে এলেন, আপনি গেলেন না। ও সম্পর্ক টিকবে না। আপনি বিপদে একজনের পাশে দাঁড়ালেন একবার দুবার। সে দাঁড়ালো না। এ সম্পর্ক টিকবে না। যেকোনো সম্পর্ক আসলে পরস্পরিক। আপনি একজনের জন্য কিছু করবেন সে আপনার জন্য কিছু করবে। এটাই হবার কথা।

আমাদের মধ্যবিত্ত জীবনে সম্পর্কের অবনতি হওয়ার একটা কারণ টাকা পয়সা, সম্পত্তি। মা ছেলে ভাই বোনের যে সম্পর্ক সেখানে বৈষয়িক বা আর্থিক লেনদেনের সম্পর্ক নেই। সম্পর্ক আছে মানসিক লেনদেনের। মা বাবা যদি মনে করেন ছেলে বা মেয়ে স্বার্থপর তাহলে সেটা মারাত্মক। অনেক গল্পে আমরা পেয়েছি শেষবয়সে ছেলে মেয়ে  ছেলের বউ মা বাবাকে দেখছে না। অন্য একজন পরিচর্যা করছে। ছেলে মেয়ের প্রতি বিরক্ত মা-বাবা এই পরিচর্যাকারীকেই সব সম্পত্তি দান করে দিচ্ছেন। এমন ঘটনা যে দু একটা ঘটে না এমন না। ঘটে । তাছাড়া বাবা-মা রাগ করে বা বাধ্য হয়ে বৃদ্ধাশ্রমে চলে যাচ্ছেন, মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এ চিত্র তো আমরা দেখছি হরহামেশা। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের স্পর্শকাতরতা বাড়ে,  অভিমান বাড়ে। যে ছেলে মেয়ে সেটা বুঝতে পারে না তারা অভাগা।

একসময় আমরা যৌথ পরিবারে বাস করেছি। দাদা-দাদি, কাকা, বাবা মা ভাইবোন। অসাধারণ সুন্দর এক পারিবারিক চিত্র। তখনো বউ শাশুড়ি ঝগড়া করেছে, ননদ ভাবি ঝগড়া করেছে আবার এ ওকে মুখে তুলে খাইয়েছে। চুল বেঁধে দিয়েছে। এখন ইউনিট পরিবার। বিচ্ছিন্ন দ্বীপ এক একটি। পরিবারের মধ্যে যেমন মিল নেই বাইরের মানুষের সঙ্গেও মেশে না। এক ফ্লাটের লোক পাশের ফ্লাটের লোককে চেনে না, জানে না। অদ্ভুত!

ঘরে বাইরে সম্পর্কের এই অবনতি প্রীতিকর নয় মোটেই। আমাদের প্রত্যেকের এ বিষয়ে সচেতন হওয়া প্রয়োজন, প্রয়োজন আত্মোপলব্ধির। প্রত্যেকেরই ছাড় দিতে শিখতে হবে। ওটা জরুরি। এই ভাঙনের মধ্যেও আমরা অনেক মধুর আর চোখ জুড়ানো সম্পর্ক দেখি। সেটা ওই ছাড় দেয়ার কারণে।

আলোকিত সংবাদ/এমআরকে

বাংলাদেশে কোরোনা

সর্বশেষ (গত ২৪ ঘন্টার রিপোর্ট)
আক্রান্ত
মৃত্যু
সুস্থ
পরীক্ষা
সর্বমোট

বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস

বাংলাদেশে

আক্রান্ত
সুস্থ
মৃত্যু

বিশ্বে

আক্রান্ত
সুস্থ
মৃত্যু
Exim Bank

নামাজের সময়সূচি

বৃহস্পতিবার ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং
ফজর ৪:২৬
জোহর ১১:৫৬
আসর ৪:৪১
মাগরিব ৬:০৯
ইশা ৭:২০
সূর্যাস্ত : ৬:০৯সূর্যোদয় : ৫:৪৩
DHAKA WEATHER

আর্কাইভ

November 2024
M T W T F S S
« Oct    
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
252627282930  

শিরোনাম

শিরোনাম সিরাজদিখানে বালুচর থানা পুলিশ এর আয়োজনে মতবিনিময় সভা শিরোনাম মুন্সীগঞ্জের ইয়াবা গাঁজা ও ফেনসিডিল সহ ৩০৮ মামলার আলামত ধ্বংস শিরোনাম টঙ্গীবাড়ী আওয়ামীলীগের পাল্টা কমিটির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল।। দুই কমিটির সভাপতি বারেক মানেন না নতুন কমিটি শিরোনাম গজারিয়ায় মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীকে হুমকি,থানায় অভিযোগ শিরোনাম বালুচরের নৌকায় ভোট চাইলেন শ্রীনগরের ১৩ চেয়ারম্যান শিরোনাম মুন্সীগঞ্জ-১ আসনের দলীয় মনোনয়নপত্র জমা দিতে দুই উপজেলা নেতাকর্মী নিয়ে মহিউদ্দিন আহমেদের যাত্রা শিরোনাম মাহাত্মা গান্ধী ইন্টারন্যাশনাল পীস অ্যাওয়ার্ড পেলেন সিরাজদিখানের কৃতিসন্তান (অবঃ) মেজর মোহাম্মাদ আখতার হোসেন শিরোনাম সিরাজদিখানে উঠান বৈঠক অনুষ্ঠিত  শিরোনাম বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারে সুপারিশ প্রাপ্ত হলেন সিরাজদিখানের কৃতি সন্তান মোঃ সাইফুল ইসলাম। শিরোনাম ৪১ তম বি‌সিএস পরীক্ষায় সিরাজ‌দিখা‌নের দুই জন চুড়ান্তভা‌বে সুপা‌রিশপ্রাপ্ত
error: Content is protected !!