চাঁদে ‘বাড়ি’ বানানোর কাজ কতদূর?
মানুষের মুখে প্রায়ই শোনা যায়, চাঁদ নিয়ে নানা কথা। সত্যিই, ঢাকায় রাস্তায় বসে চাঁদের চিন্তা...
প্রকাশিত: ৪:৪৫ অপরাহ্ণ, ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২০
ছবি: আলোকিত সংবাদ
বোতলের গায়ের মূল্য ১৫ টাকা আপনি ২০ টাকা দিয়ে কেন ক্রয় করলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভাই ২০ টাকার নিচে এরা দেয় না। পিপাসা লাগছে তাই ৫ টাকা বেশি হলেও কিনতে হচ্ছে। কিছু করার নেই। পানি কেনার জন্য তো আর মারামারি করতে পারিনা।
গত কয়েক বছরে আর্থ সামাজিক উন্নয়নে দেশের বাজারে বোতলজাত পানির চাহিদা বেড়েছে জ্যামিতিক হারে। যার ফলে সমাজের প্রায় সব স্তরের মানুষই এখন বোতলজাত পানি পানে অভ্যস্ত। তবে বাজারের সব প্রতিষ্ঠানেরই বোতলজাত পানি তার উৎপাদন খরচের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে।
ট্যারিফ কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ৫০০ মিলিলিটার ধারণ ক্ষমতার একটি পেট বোতল তৈরি করতে খরচ হয় ৩ টাকা ৬৭ পয়সা। এর সঙ্গে লেভেলিংয়ে ১ টাকা ও অন্যান্য ব্যয় হয় আরো ৩৭ পয়সা। আধা লিটার পানি পরিশোধনে খরচ হয় ১ টাকা। এ হিসাবে ৫০০ মিলিলিটার পানি উৎপাদনে ভ্যাটসহ খরচ হচ্ছে ৬ টাকা ৯৫ পয়সা। পরিবেশকদের কাছে তা বিক্রি হচ্ছে ৭ টাকা ৭৫ পয়সায়। তবে আধা লিটার পানির জন্য ভোক্তাকে গুনতে হচ্ছে ১৫ টাকা। সিন্ডিকেটের কারণে কোথাও-কোথাও ২০ টাকায়ও বিক্রি হয়।
একই হিসাবে এক লিটারের একটি পেট বোতলের দাম সর্বোচ্চ ৭ টাকা ১২ পয়সা। এর সঙ্গে পরিশোধন ও আনুষঙ্গিক খরচ যোগ করলে এক লিটার পানি বোতলজাতে খরচ পড়ে সর্বোচ্চ ১০ টাকা ৪৯ পয়সা। অথচ খুচরা পর্যায়ে তা বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকায়। দুই লিটারের একটি পেট বোতলের দাম ১২ টাকা ৬৬ পয়সা। পরিশোধন ও অন্যান্য খরচ হিসাব করলে দাম পড়ে ১৯ টাকা ১৬ পয়সা। খুচরা বাজারে যা বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়। একইভাবে আড়াই লিটার পানি ৩৫ ও সাড়ে চার লিটার ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
পানির উৎপাদন খরচের সঙ্গে বিক্রয়মূল্যের অস্বাভাবিক ফারাক সম্পর্কে ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান জ্যোতির্ময় দত্ত বলেন, আমি নতুন দায়িত্বে এসেছি। এ বিষয়টি নিয়ে আমি এখনো পুরোপুরি কিছু জানি না।
বিএসটিআই সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশে পানি বাজারজাতে লাইসেন্স রয়েছে ১১০টি প্রতিষ্ঠানের। এর মধ্যে বোতলজাত পানি উৎপাদন করছে পারটেক্স গ্রুপের মাম, সিটি গ্রুপের জীবন, আকিজ গ্রুপের স্পা, প্রাণ গ্রুপের প্রাণ, মেঘনা গ্রুপের ফ্রেশ ও একমি গ্রুপের একমি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএসটিআইয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, বোতলজাত ও জারের পানির মধ্যে গুণগত তেমন কোনো পার্থক্য নেই। গভীর নলকূপ থেকে পানি সংগ্রহের পর তা পরিশোধন করে বোতল ও জারে বাজারজাত করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে তারা পানির ক্ষারীয় অংশ, সিসা, আর্সেনিক, লোহা ও অন্যান্য উপাদান সঠিক মাত্রায় রয়েছে কিনা, তা পরীক্ষা করে দেখেন।
এ বিষয়ে পারটেক্স গ্রুপের ব্র্যান্ড ম্যানেজার ইউসুফ জানান, উন্নত মানের উপাদান দিয়ে তাদের কোম্পানির বোতল তৈরি করা হচ্ছে, যা শতভাগ ফুড গ্রেডেড। তাছাড়াও বোতল তৈরির উপাদানের দামও আন্তর্জাতিক বাজারে বেড়েছে। তাই পানির দাম একটু বেশি।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, আলপাইন ফ্রেশ ওয়াটারের প্রতি ১৯ লিটারের জার বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা ৫০ পয়সায়। এ হিসাবে প্রতি লিটার পানির দাম পড়ে ৪ টাকা ২৪ পয়সা। ৫০০ মিলিলিটার পানির দাম পড়ে ২ টাকা ১২ পয়সা।
এদিকে, রাজধানীর উত্তরা, খিলক্ষেত, মিরপুর, ধানমন্ডি, কারওয়ান বাজার, মহাখালিসহ বিভিন্ন জায়াগা ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে প্রায় সব কোম্পানির বোতলজাত পানির মূল্য একই। আধা লিটার পানির মূল্য ১৫ টাকা, ১ লিটার পানির মূল্য ২০টাকা, ২ লিটারের দাম ৩০ টাকা ও সাড়ে ৪ লিটার বোতলজাত পানির মূল্য ৭০ টাকা। তবে রাজধানীর গাবতলী-মহাখালী বাস টারমিনাল, কমলাপুর-বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনসহ বেশ কিছু জায়গায় ভাসমান পানি ব্যবসায়ীরা ৫০০ মিলিলিটার বোতলজাত পানির মূল্য রাখছেন ২০টাকা।
যে পানির উৎপাদন খরচ মাত্র ৭ টাকা, বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে ১৫ টাকা থেকে ২০ টাকা। বোতলজাত পানির ব্যবসায় মাত্রাতিরিক্ত এ নৈরাজ্য সাধারণ মানুষকেও এখন ভাবিয়ে তুলছে। সংশ্লিষ্টদের দাবি, সঠিক নজরদারি ও জনসচেতনতার অভাবেই পানি বাজারজাতকারী এসব প্রতিষ্ঠানগুলো ইচ্ছামত মুনাফা আদায় করে সাধারণ মানুষের পকেট কাটছে।
আলোকিত সংবাদ/এমআরকে
ফজর | ৪:২৬ |
জোহর | ১১:৫৬ |
আসর | ৪:৪১ |
মাগরিব | ৬:০৯ |
ইশা | ৭:২০ |
শিরোনাম