চাঁদে ‘বাড়ি’ বানানোর কাজ কতদূর?
মানুষের মুখে প্রায়ই শোনা যায়, চাঁদ নিয়ে নানা কথা। সত্যিই, ঢাকায় রাস্তায় বসে চাঁদের চিন্তা...
প্রকাশিত: ৩:১৩ পূর্বাহ্ণ, ২ অক্টোবর, ২০২০
সিরাজদিখান (মুন্সিগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ যে বয়সে কাঁধে থাকার কথা স্কুলের ব্যাগ। সে কাঁধে আজ সংসারের দায়ীত্বের বোঝা। যে বয়সে আনন্দ আর উল্লাস করে কাটাবার কথা। সে বয়সে আজ সংসারের খরচ যোগান দেওয়ার চিন্তায় দিশেহারা হয়ে ইজিবাইকের স্টার্টিং ধরে রাস্তায় রাস্তায় ছুটে চলা। জীবন মানে যুদ্ধ। এ যুদ্ধে কেউ জয়ী হয়, কেউবা আবার ধৈর্য্য হারিয়ে খুব সহজেই হেরে যায়। অনেকে আবার এ জীবন যুদ্ধ চালিয়ে যায় যে পর্যন্ত জয়ী না হতে পারে। জীবন নামের যুদ্ধে জয়ী হওয়াটা খুব কষ্টসাধ্য ব্যাপার। এ যুদ্ধে জয়ী হতে হলে ধৈর্য্য ও মনোবল ধরে রাখা সবচেয়ে জরুরী। জীবন যুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া ১৫ বছরের এক কিশোর মাহীম। স্বামীহারা মায়ের মুখ যেন তার জীবন যুদ্ধে জয়ী হতে সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার একমাত্র হাতিয়ার। মাহীম উপজেলার রশুনিয়া ইউনিয়নের সিরাজদিখান বাজার সংলগ্ন গোডাউন ঘাট গ্রামের অহিদুলের ছেলে। বিবাহিত স্ত্রীকে তার স্বামীর অধিকার ও অবুঝ সন্তানদের স্নেহ ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত করে জন্মদাতা পিতাও যখন পারি জমিয়েছে অন্য ঘরে। তখন মা ও একমাত্র ভায়ের দায়ীত্ব কাধে নিয়ে রাস্তায় নেমেছে মাহীম। জন্মদাতা পিতা যখন মুখ ফিরিয়ে নিলো তখন কারো কাছে হাত না পেতে কিশোর (১৫) বয়সে মা আর ছোট ভাইয়ের দায়ীত্ব কাঁধে নিয়ে আরো এক দৃষ্টান্তের জন্ম দিয়েছে মাহীম।ঘটনার বিবরণী ও স্থানীয় ভাবে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাহীমের বাবা মা একই উপজেলার বাসিন্দা। তাদের সংসার জীবনে দুটি পুত্র সন্তান মাহীম (১৫) ও সোহান (১২)দের জন্ম হয়। সন্তানরা যখন বড় হতে শুরু করলো ঠিক তখনি বাবা অহিদুল অন্য এক নারীর প্রেমে পরে স্ত্রী সন্তানের মায়া ত্যাগ করে পারি জমায় ২য় স্ত্রীর সংসারে। তিন বছর ধরে মাহীমের বাবার খোঁজ নেয়না তাদের। শেষে ছেলে সন্তান নিয়ে মাথা গোজার ঠাই হয় একটি ভাড়া বাড়ীতে। স্বামী ছাড়া যখন সংসার চলছিলো না। তখন বড় ছেলে মাহীমকে স্থানীয় বাজারে একটি স্টিলের আলমারির দোকানে কাজে লাগিয়ে দেয় তার মা। কবে কাজ শিখে রোজগার করবে? কবে সংসারের খরচ যোগান দিবে তার ছেলে? এসব চিন্তায় দিন কাটছিলো তার মায়ের। সংসারে রোজগার করার মতও ছিলো না কেউ। এদিকে বাড়ী ভাড়ার চাপ। জীবনটা যখন প্রায় থেমে থেমে যাচ্ছিলো। তখন মাহীমের মা তার আত্নীয় স্বজনদের কাছে সাহায্য চেয়েও পায়নি। ৬ মাস আগে ৬৬ হাজার টাকা সুদে এনে বড় ছেলে মাহীমকে একটি ইজিবাইক কিনে দেয় তার মা। সেই থেকে চলছে মাহীমের জীবন যুদ্ধের সংগ্রাম। মাহীম আদৌ জানে না তার জীবন যুদ্ধ নামের সংগ্রাম কবে গিয়ে শেষ হবে। গত বুধবার প্রতিবেদক সিরাজদিখান বাজার থেকে বাড়ী ফেরার উদ্দেশ্যে একটি ইজিবাইকে চড়ে বসেন। তখন ইজিবাইক চালককে কম বয়সে ইজিবাইক চালানোর কথা জিজ্ঞেস করলে হৃদয় বিদারক এসব তথ্য বেড়িয়ে আসে। সে সময় মাহীম বলেন, তিন বছর ধরে বাপে অন্য একখানে বিয়া করছে। সেখানে বৌ লইয়া থাকে। আমাগো খোঁজ খবর নেয়না। মা আমাগো নিয়া খুব কস্টে দিন কাটাইছে। আমারে স্টিলের দোকানে কাজে দিছিলো। কবে কাজ শিখুম আর কবে টাকা পামু? তাই মায়ে মামা মামিগো কাছে গেছিলো একটা অটো কিনার টাকা আনার লেগা।কিন্তু তারা দেয় নাই। পরে আমার মায়ে সুদে টাকা নিয়া আমারে এই অটোটা কিনা দিছে। এটা চালাই আর মায়েরে নিয়া দেই। প্রশ্নের জবাবে মাহীম বলেন, লেখাপড়া করতে চাইলে কি হইবো, কোন সুযোগ নাই। অটো চালাইয়া যে টাকা পাই তা থেইকা কিস্তি আর বাড়ী ভাড়া দিয়া সংসারে খরচ করে মায়। পড়াশোনা করে সুশিক্ষিত হয়ে মাকে সুখী দেখার পাশাপাশি দেশ ও সমাজের জন্য ভালো কিছু কতে চায় এমনি স্বপ্ন দেখে মাহীমের জ্বলে ভেজা দুটি চোখ।
ফজর | ৪:২৬ |
জোহর | ১১:৫৬ |
আসর | ৪:৪১ |
মাগরিব | ৬:০৯ |
ইশা | ৭:২০ |
শিরোনাম